ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন, করনীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ, করনীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার

Table of Contents

ডেঙ্গু জ্বর কিঃ

ডেঙ্গু জ্বর সাধারনত একটি মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমন। সাধারনত এ রোগের ধারক ও বাহক হলো এডিস মশা। এরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে একটি মশা কামড় দিয়ে ভাইরাস বহন করাবস্থায় যখন অন্য একজন সুস্থ ব্যাক্তিকে কামড় দেয় তখন সেই ব্যাক্তিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রতিদিন খুব দ্রুত ও অধিক পরিমান মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও সনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এবং অনেক ক্ষেত্রে অবহেলার কারনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। তবে সতর্কতার সাথে নিয়ম মোতাবেক ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরন করলে ও চিকিৎসা গ্রহন করলে এ রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। পূর্বে আক্রান্ত রোগীরা পুনরায় আক্রান্ত হলে ভয়াভয়তা বৃদ্ধি পায়। এ আলোচনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর লক্ষন, করনীয় ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষনঃ

  • প্রচন্ড জ্বর (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস/ ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
  • ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবারও জ্বর আসা।
  • চোখের পিছনে ব্যাথা অনুভব হওয়া।
  • তীব্র মাথাব্যাথা।
  • মাংসপেশী ও হারের জয়েন্টে ব্যাথা হওয়া।
  • মাথাঘোরা।
  • বমি ভাব হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুরি হওয়া, চামড়ায় লালচে দাগ ও র‌্যাশ হওয়া।

ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর পর্যায়ের লক্ষনঃ

  • ক্রমাগত বমি হওয়া।
  • প্রচন্ড পেট ব্যাথা হওয়া।
  • নাক ও মারি থেকে রক্ত পড়া।
  • মলমুত্র ও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
  • অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা।
  • দ্রুত ও ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস।
  • অস্থিরতা, ক্লান্তি ও বিরক্তিভাব।

ডেঙ্গু রোগের জীবানু মানুষের রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্থ করে রক্তনালীতে ছিদ্রের সৃষ্টি করে। যার ফলে রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। এবং রোগী প্রচন্ড রকম দুর্বলতা অনুভব করে। এক্ষেত্রে গুরুতর রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বারবার পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাটিলেট ও রক্তে অন্যন্য উপাদান পর্যবেক্ষনে রাখা উচিত ও জরুরী ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর রোগীর প্লাটিলেট এর সংখ্যা কত হয়ঃ

একজন সুস্থ ব্যাক্তির প্লাটিলেট সংখ্যা সাধারনত ১,৫০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট সংখ্যা দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। উচ্চ ঝুকিপূর্ন রোগীদের ক্ষেত্রে তা কমে ২০,০০০ নেমে যেতে পারে। ও প্লাটিলেট কমা ও রক্তক্ষরনের লক্ষন প্রকাশ পেলে দ্রুত প্লাটিলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমন কমার সাথে সাথে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কি খেলে প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়ঃ

  • সাইট্রাস ফল
  • কাঠবাদাম
  • দই
  • সূর্যমুখী বীজ
  • মিষ্টি কুমরার বীজ
  • লেবুর সরবত (ভিটামিন সি)
  • পেপের জুস
  • বেদানা
  • আমলকি (এটি রুচি বাড়াতে ও সাহায্য করে)
  • গ্রীন টি
  • ক্যাপসিকাম
  • ব্রোকলি
  • পালংশাক
  • পেয়ারার শরবত।
  • কমলা বা মালটার রস।
  • হলুদ।
  • নিম পাতার রস ভালো কার্যকরী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

ডেঙ্গু জ্বর রোগীর খাবার তালিকাঃ

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারগন প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট ও পটাশিয়াম সম্বৃদ্ধ খাবার গ্রহন করার পরামর্শ দেন। যেমনঃ

  • প্রচুর পরিমান পানি ও তরল খাবার খাওয়া উচিত।
  • স্যালাইন।
  • স্যুপ
  • ফলের রস।
  • লেবুর সরবত।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডাল, ডিম ও মুরগীর মাংস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
  • ভিটামিন সি যুক্ত খাবার
  • জিঙ্ক- সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, মটরশুটি
  • পেপে।
  • ডাবের পানি।

ডেঙ্গু জ্বর রোগীর যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

সহজে হযম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খাওয়া উচিত নয়। যেমনঃ

  • আমিষ জাতীয় খাবার
  • চর্বিযুক্ত খাবার।
  • তৈলাক্ত ও ভাজাভুজি খাবার।

ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

  • ডেঙ্গু জ্বরে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরী চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
  • প্রচুর পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরের ঔষধ হিসেবে ডাক্তারগন শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • ব্যাথা কমাতে কোন ভাবেই ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কারন এতে রক্ত ক্ষরন বাড়তে পারে।
  • প্রচুর পরিমান পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত তাপ নিয়ন্ত্রনে রোগীর কপাল হাত পা হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ও সংক্রমন রোধে করনীয়ঃ

  • অবশ্যই মশারী টানানো টানাতে হবে।
  • বাড়ীর আশ পাশ পরিস্কার রাখা উচিত।
  • শহরে দুই বিল্ডিং এর মধ্যবর্তী স্থানে ময়লা ফেলা উচিত নয় ও নিয়মিত পরিস্কার করা উচিত।
  • টব, ফুলদানী, ডাবের খোল, ভাঙ্গা মগ বা পানি জমতে পারে এধরনের কোন কিছুতে পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।
  • যথাসম্ভব ফুল হাতা জামা ও ফুল প্যান্ট ও জুতা পরিধান করা উচিত।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু এক মহা আতঙ্কের নাম। সচেতনতা ও যথাসময়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহনের মাধ্যমেই কেবল এ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

আরোও জানুনঃ

মামলা থাকলে সরকারী চাকুরী হবে কি?

মামলায় কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়?

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? কিভাবে পাবেন প্রতিকার

পারিবারিক নারী নির্যাতনে কি কি মামলা করা যায়

কোম্পানী গঠনের খরচ ও সহজ নিয়ম

জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপসমূহ

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

বিঃদ্রঃ আমাদের আলোচনাগুলি শুধুমাত্র জ্ঞান ও জানার জন্য। কেউ যদি আমাদের তথ্যগুলি আপনার কোনো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাবহার করেন তার দায় আপনার একান্তই নিজের। প্রয়োজনে ডাক্তারের সহিত পরামর্শ করুন।

আমাদের আয়োজন গুলি ভালো লাগলে ও আরোও লিখা পড়তে আমাদের ব্লগ পেজে চোখ রাখুন, ইউটিউব আইনের আশ্রয় এর সাথে থাকুন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট, কিংবা ওয়েবসাইটের মেসেজ অপসন কিংবা ফেসবুক পেজ আইনের আশ্রয়ে মেসেজ করতে পারেন। ধন্যবাদ

Law Article

আত্বরক্ষার অধিকার

অপরাধ করেও কখন মাফ পেয়ে যাবেন।। আত্বরক্ষার অধিকার

জান বাচানো ফরজ এরুপ একটি কথা আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। আসলেই তাই। আইনেও নিজের জীবন ও সম্পত্তি বাচানোর জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর এজন্য যদি

আরও পড়ুন...
২০২২-২০২৩ বাজেট

২০২২-২০২৩ বাজেট এ কোন মন্ত্রনালয় কত বরাদ্দ পাচ্ছে

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আজ ৯ জুন, ২০২২ উত্থাপন করেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। উক্ত প্রস্তাবনায় জানা গেছে বাংলাদেশের ৬২ টি মন্ত্রনালয়

আরও পড়ুন...
cheque dishonor

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? কিভাবে পাবেন আইনি প্রতিকার।

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? বর্তমান সময়ে চেক একটি গুরুত্বপূর্ন জিনিস। আমরা আমাদের দৈনন্দিন ব্যাবসায়িক ও ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যাপকভাবে চেকের ব্যাবহার করে থাকি। আবার

আরও পড়ুন...
সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার

সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার। সাইবার ক্রাইম এর শাস্তি কি। WHAT IS CYBER BULLYING AND REMEDIES.

সাইবার বুলিং কি? সাইবার বুলিং হচ্ছে একধরনের সাইবার অপরাধ। বর্তমান সময়ে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সাধারন অর্থে বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুইজন মানুষের

আরও পড়ুন...