মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

Table of Contents

আইনের জন্মই অপরাধ দমন ও নিরোধ করা ও অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে তা কার্যকর করা। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমেই কেউ যদি কাউকে মিথ্যাভাবে শাস্তি ভোগ করাতে চায়, সেটিই আইনের চোখে মহা অন্যায়। যার কারনে প্রায় প্রত্যেকটি আইনেই মিথ্যা মামলা দায়ের বা সহযোগিতা করার কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। সেই বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

দন্ডবিধির ২০৯ ধারামতেঃ

কোন ব্যাক্তি অন্য কোন ব্যাক্তির ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিলে তিনি ২ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা উভয় বিধ দন্ডেই দন্ডিত হবে। উক্ত ধারাটি আপোষের অযোগ্য ও আমল অযোগ্য ( আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না) ও জামিনযোগ্য অপরাধ।

দন্ডবিধির ২১১ ধারামতেঃ

কোন ব্যাক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অপর কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি ২ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে।

তবে যদি মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ৭ বছরের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডের কোন ধারায় যদি ম্যিথ্যা মামলা করে তাহলে উক্ত ব্যাক্তি ৭ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে।

উক্ত ধারাটি আপোষের অযোগ্য ও আমল অযোগ্য (আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না) ও জামিনযোগ্য অপরাধ।

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারামতেঃ

কোন ম্যজিষ্ট্রেট যদি কোন মামলায় আসামীকে খালাষ দেন এবং তার কাছে যদি মনে হয় যে, অভিযোগটি মিথ্যা, তুচ্ছ ও বিরক্তিকর ছিল তাহলে তিনি বাদীকে কারন দর্শানোর নির্দেশ দিতে পারেন। এবং তার কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগটি ম্যিথা , তুচ্ছ ও বিরক্তিকর ছিল তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১০০০/- টাকা পর্যন্ত যেকোন পরিমান টাকা জরিমানা করতে পারেন। উক্ত টাকা দিতে ব্যার্থ হলে ৩০ দিন পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করতে পারবেন।

এছাড়াও ম্যাজিষ্টেট উক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ৬ মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদ পরিমান কারাদন্ড ও ৩০০০/- পর্যন্ত যেকোনো পরিমান টাকা জরিমানা করতে পারবেন।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৬ ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি অপর কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কারন নাই জেনেও যৌতুক দাবীর মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে তাহলে উক্ত ব্যাক্তিকে আদালত সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত যেকোনো পরিমান সময়ের জন্য কারাদন্ড ও ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমান অর্থদন্ড বা উভয় প্রকার দন্ডই দিতে পারবেন।

উল্লেখ্য যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা মোতাবেক নারী পুরুষ উভয়েই উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারামতেঃ

কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অপর কোন ব্যাক্তিকে হয়রানী করার জন্য অপরাধ করে নাই জানা সত্বেও এই আইনে মিথ্যা মামলা করেন বা করান তাহলে মামলা কারী ব্যাক্তি ও উস্কানিদাতা ব্যাক্তি উভয়েই সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো পরিমান কারাদন্ড ও জরিমানা দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

এরুপ অভিযোগ বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রুনালে লিখিত আকারে দায়ের করলে তিনি বিচার করবেন।

দূর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৮ গ (1) ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো মিথ্যা জেনেও বা সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে কোনো মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ দায়ের করে, যার উপর ভিত্তি করে মামলা বা তদন্ত চলার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে গন্য হবে। ও এরুপ কারনে তিনি সর্বনিন্ম ২ বছর পর্যন্ত ও সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদন্ড ও জরিমানা দন্ডে বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এর ৩২ ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি অপরাধ করে নাই জেনেও কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অত্র আইনে মিথ্যা মামলা করে তাহলে আদালত তাকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদন্ড ও ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমান জরিমানা বা একসাথে উভয়প্রকার দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন।

এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এর ৮ ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা মামলা করেন বা করতে সহায়তা বা উস্কানি দেন তাহলে উক্ত ব্যাক্তিগন সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো পরিমান কারাদন্ড ও কারাদন্ডের অতিরিক্ত জরিমানা দন্ড প্রদান করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্রুলাল উক্ত অভিযোগের বিচার করবেন।

আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ এর ৬ ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে, মামলা করার কারন নাই জেনেও আইন শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মিথ্যা মামলা করেন বা করতে সহায়তা বা উস্কানি দেন তাহলে উক্ত ব্যাক্তিগন সর্বনিন্ম ২ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত যেকোনো পরিমান কারাদন্ড ও জরিমানা দন্ড দন্ডিত হবেন।

শিশু আইন ২০১৩ এর ৮৩ ধারামতেঃ

কোনো ব্যাক্তি যদি কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা তুচ্ছ ও বিরক্তিকর তথ্য প্রদান করেন তাহলে আদালত উক্ত ব্যাক্তিকে কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে না তার জন্য কারন দর্শাইতে নির্দেশ দিবেন ও সন্তুষ্ট না হলে যাহার বিরুদ্ধে উক্ত মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হয় তার অনুকুলে সর্ব নিন্ম ২৫ হাজার টাকা ও তার উর্ধে যেকোনো পরিমান জরিমানার আদেশ দিবেন। ও জরিমানা ব্যার্থতায় ৬ মাস পর্যন্ত যেকোনো পরিমান কারাদন্ড প্রদান করবেন।

পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন ২০১২ এর ১৩ (১) ধারামতেঃ

যদি কোনো ব্যাক্তি বা কতৃপক্ষ কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে, ক্ষতি করার জন্য হয়রানীমুলকভাবে, মামলা করার কারন নাই জেনেও মিথ্যা মামলা করেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত যেকোনো পরিমান কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমান জরিমানা দন্ড দন্ডিত হবেন।

আরোও জানুনঃ

পারিবারিক নারী নির্যাতনে কি কি মামলা করা যায়

মামলা থাকলে সরকারী চাকুরী হবে কি?

মামলায় কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়?

কোম্পানী গঠনের খরচ ও সহজ নিয়ম

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? কিভাবে পাবেন প্রতিকার

আইন বিষয়ে আরোও জানতে আমাদের ফেসবুক পেজ আইনের আশ্রয়ে মেজেস করতে পারেন।

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

Law Article

মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

আইনের জন্মই অপরাধ দমন ও নিরোধ করা ও অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে তা কার্যকর করা। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমেই কেউ যদি কাউকে মিথ্যাভাবে শাস্তি ভোগ করাতে

আরও পড়ুন...
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন ও নিবন্ধন পদ্ধতি ও খরচ

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন ও নিবন্ধন পদ্ধতি ও খরচ

ব্যাবসার পূর্নাঙ্গতা প্রদানের জন্য ভাবছেন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন করবেন ও নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন করবেন। তাহলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী নিবন্ধনে আপনাকে আগেই ভাবতে হবে কিছু

আরও পড়ুন...
চেক ডিজঅনার কি এবং চেক ডিজঅনার হলে কিভাবে মামলা করবেন।

চেক ডিজঅনার কি এবং চেক ডিজঅনার হলে কিভাবে মামলা করবেন।

বর্তমান সময়ে চেক ডিজঅনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সাধারনত, আমরা প্রতিনিয়ত ব্যাংকিং কার্যক্রম ও লেনদেন করতে নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে চেক ব্যাবহার করে থাকি। বিশেষত, ব্যাবসায়িক

আরও পড়ুন...