কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের যত কিচ্ছা কাহিনী

কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের যত কিচ্ছা কাহিনী

Table of Contents

বিবাহ আমাদের সমাজে একটি পরিচিত ও আনন্দের অধ্যায়। বিবাহের মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ একত্রে বসবাস ও পরিবার গঠনের অনুমতি লাভ করে। সাধারনত, পরিবারের লোকজন ভালমন্দ বিচার করে একজন উপযুক্ত পাত্র এবং প্রাত্রী নির্বাচন করে থাকেন। এবং উভয়ের পরিবার একত্রে বসে সামাজিক ও ধর্মীয় কিছু আচার অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে বিবাহ কার্যক্রমটি সম্পন্ন করে থাকেন। কিন্তু সময়ের সাথে চিরাচরিত এ নিয়েমে এসেছে অনেক ভিন্নতা। বন্ধুত্ব ও একত্রে চলাচলের সুযোগে আজকাল অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরাই নিজেদের জীবন সঙ্গী নিজেরাই পছন্দ করে নেন। আধুনিকতার এ যুগে সে সম্পর্ক অনেক পরিবারই মেনে নেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েদের এ পছন্দকে অনেক পরিবারই মেনে নিতে চান না। ফলে, তখনই বাধে যত সমস্যার। অনেক ছেলেমেয়েই নিজের পছন্দের জীবন সঙ্গীকে হারাতে চান না। তখন বাধ্য হয়ে বেছে নেন বাবা মা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করতে । এধরনের বিবাহ আমাদের সমাজে কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ে নামে সুপরিচিত।

আইনের আশ্রয়ের আজকের আয়োজনে আমরা আলোচনা করব, কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের সব কিচ্ছা কাহিনী নিয়ে।

কোর্ট ম্যারিজ আসলে বিশেষ কোন বিয়ে নয়। আর সকল বিয়ের মত এক সকল বিয়েতেও থাকেন একজন ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার, ২জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ স্বাক্ষী, অথবা ১জন পুরুষ স্বাক্ষীর অনুপস্থিতে ২ জন মহিলা স্বাক্ষী। এবং দেনমোহরানা। একটি বৈধ বিবাহের প্রধান ২টি শর্ত হল স্বাক্ষী এবং দেনমোহরানা। এবং আইনমোতাবেক অবশ্যই পাত্রের বয়স ২১ বছর এবং পাত্রীর বয়স ১৮ বয়স হওয়া অবশ্য বাধ্যতামুলক। তবে এক্ষেত্রে সকল আইনগত কার্যাদি সঠিকভাবে পালন করতে আপনাকে একজন আইনজীবির সরনাপন্ন হতে হবে। তিনি আইনগত আরও বাড়তি কিছু কার্যক্রম গ্রহন করে থাকবেন। যেন আপনার বিবাহ টি আইনগত ভাবে আরও দৃঢ় ও সঠিক হয়।

বিজ্ঞ আইনজীবি পাত্র এবং পাত্রীর মধ্যকার একটি হলফনামা সম্পাদন করবেন। যাহাতে বিবাহের বিষয়ে উভয়ে হলফ করবে। যাহাতে উল্ল্যেখ থাকবে বিবাহের দেনমোহরানা কত টাকা। আরও উল্ল্যেখ থাকবে, তাহারা উভয়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। তাহাদেরকে কেউ জোড় করে আনেন নি এবং তাহারা সেচ্ছায়, সঞ্জানে, সুস্থ মস্তিস্কে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় এসেছেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এবং পাত্র, পাত্রীর সকল ভরনপোষন নিয়মিত পরিশোধ করবেন এবং উক্ত হলফনামা একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট কিংবা ১ম শ্রেনীর ম্যজিষ্ট্রেটের সম্মুখে সম্পাদিত হবে এবং উক্ত ম্যজিষ্ট্রেট হলফনামাটি স্বাক্ষর করবেন। অতপর আইনজীবির উপস্থিতিতে বিবাহ রেজিষ্ট্রারে পাত্র এবং পাত্রী উভয়ে এবং স্বাক্ষীগন সকলে সহি স্বাক্ষর করতে হবে।এবং বিবাহের প্রমানস্বরুপ উক্ত রেজিষ্ট্রারের বালাম নাম্বার, পৃষ্ঠা নং এবং ক্রমিক নাম্বার সম্বলিত একটি রিসিট প্রদান করবেন। এবং বিবাহটি সুস্পন্ন হবে।

কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের যত কিচ্ছা কাহিনী নিয়ে ইউটিউব ভিডিওঃ

কোর্ট ম্যারিজ পরবর্তী সমস্যাসমুহ ও তার প্রতিকারঃ

সাধারনত কোর্ট ম্যারিজ পরিবার এবং বাবা মায়ের অমতে করা হওয়ার কারনে অনেক বাবা মা ই বিবাহ মেনে নেন না। যার ফলশ্রতিতে ছেলে এবং মেয়ের জীবনে নেমে েআসে এক কালো অধ্যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়ের পরিবার ছেলের বিরুদ্ধে ঢুকে দেন একাধিক মামলা। যার মধ্যে অপহরন মামলা অন্যতম। এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষন সহ নির্যাতনের একাধিক মামলা এবং যৌতুক নিরোধ আইনেও মামলা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ছেলেকেই বেশি হয়রানী হতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু এবং জেল হাজতেও যেতে হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিবাহের সঠিক কাগজপত্র এবং প্রমানাদি আপনার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

আর এক্ষেত্রে যদি পাত্রী ছেলের পক্ষালম্বন না করে বাধ্য হয়ে বাবা মায়ের পক্ষাবলম্বন করে তাহলে ছেলের সমস্যা বেড়ে যায় আরও দ্বিগুন। তবে সঠিক ভাবে সকল বৈধ কাগজাদি হাতে রেখে আইনজীবির পরামর্শ মোতাবেক মামলায় প্রতিদ্বনীতা করলে অবশ্যই ছেলের পক্ষে ন্যয়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হলেও ছেলেপক্ষেই রায় হয় এবং একজন নিরপরাধ প্রেমিক জেল ও জরিমানার গ্লানি থেকে মুক্তি পান।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পাত্র এবং পাত্রী ভিন্ন ধর্মের হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন যে, আইনে এধরনের বিবাহের সুযোগ আছে কিনা। The special Marriage Act III মোতাবেক ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের হলেও বিবাহের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ধর্ম পরিবর্তন করতে হয় না এবং উভয়েই উভয়ের ধর্ম পালন করতে পারেন। এধরনের বিবাহ Special Marriage নামে পরিচিত। যদিও ইসলাম কখনও এধরনের বিবাহকে সমর্থন করে না। এবং ইসলাম ধর্মে এধরনের বিবাহ শাস্তিযোগ্য ও অগ্রহনযোগ্য।

অতপর, বিবাহের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাবা মা ও পরিবারের প্রতি অাস্থা রাখা উচিত। কারন পরিবার কখনই অাপনার অমঙ্গল চাইবে না। এবং আপনার পছন্দের ক্ষেত্রেও আপনার পরিবারের পছন্দ এবং অবস্থানের কথা মাথায় রেখে পছন্দ করা উচিত । যেন বাবা মায়ের মনে কষ্ট না হয়। কারন নিশ্চই আপনার পছন্দের চেয়ে আপনার বাবা মা উত্তম। সকলের মঙ্গল কামনা করি।

আমাদের আয়োজনগুলি ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আপনার মতামত ও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানান।

আইন বিষয়ে আরও জানতে আমাদের আইনের আশ্রয় চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন ও আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজ আইনের আশ্রয়ের সাথেই থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।

Law Article

আত্বরক্ষার অধিকার

অপরাধ করেও কখন মাফ পেয়ে যাবেন।। আত্বরক্ষার অধিকার

জান বাচানো ফরজ এরুপ একটি কথা আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। আসলেই তাই। আইনেও নিজের জীবন ও সম্পত্তি বাচানোর জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর এজন্য যদি

আরও পড়ুন...
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন ও নিবন্ধন পদ্ধতি ও খরচ

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন ও নিবন্ধন পদ্ধতি ও খরচ

ব্যাবসার পূর্নাঙ্গতা প্রদানের জন্য ভাবছেন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠন করবেন ও নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন করবেন। তাহলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী নিবন্ধনে আপনাকে আগেই ভাবতে হবে কিছু

আরও পড়ুন...
যেসব সেবা নিতে দিতে হবে আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট

২০২২-২০২৩ অর্থবছর হতে যেসব সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট লাগবে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছর হতে সেবা গ্রহন করতে আগের মত শুধুমাত্র টিআইএন (TIN) জমা দিলেই হবে না। সাথে জমা দিতে প্রত্যেক বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তীস্বীকারপত্র (Acknowledgement

আরও পড়ুন...