মামলা থাকলে সরকারী চাকরী হবে কি?

মামলা থাকলে সরকারী চাকরী হবে কি ?

Table of Contents

বর্তমান সময়ে চাকরীতে মামলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও ভাবনার বিষয়। অধিকাংশ চাকরীপ্রত্যাশীর মনেই এক গভীর দুশ্চিন্তার বিষয় হল মামলা। সবার মনেই একই প্রশ্ন। মামলা থাকলে সরকারী চাকরী হবে কি?

বর্তমানে প্রায় সকল সরকারী, আধা সরকারী ও বিভিন্ন ব্যাংকের চাকরীতে মামলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এবং এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে করা হয় শক্তপোক্ত পুলিশ ভেরিফিকেশন। কিছু কিছু সরকারী চাকুরীতে ৩ স্তরের পুলিশ ভেরিফিকেশনও করা হয়। সেসব সংস্থাগুলো হল-

১। পুলিশ ভেরিফিকেশন।

২। এসবি  (স্পেশাল ব্রাঞ্চ)।

৩। NSI (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) National Security Intelligence.

বর্তমান সময়ে পুলিশের প্রায় সকল কিছু অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় সহজেই জানা যায় কারও বিরুদ্ধে পূর্বে কোন মামলা রয়েছে কিনা। এবং কোন মামলা থাকলে পুলিশ যদি আপনার PC&PR (Previous Cases and Previous Record) এ মামলার কথা উল্ল্যেখ করে দেন, তাহা হলে আপনি আপনার চাকরী নামক চাঁদটি হাতে পেয়েও হাতছাড়া করতে পারেন।

সরকারী চাকরী ছাড়াও কোন বেসরকারী/ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানও জেনে শুনে কোন মামলায় অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে চাকরী দিতে চান না। কারন কোন প্রতিষ্ঠানই চান না পুনরায় কোন কর্মকর্তাকে নিয়ে ঝামেলা পোহাতে। যা একজন চাকুরী প্রত্যাশীর জন্য আরও দুশ্চিন্তার কারন।

তবে মামলা থাকলেই যে, আপনি চাকুরী পাবেন না বিষয়টি এমন নয়। কারন একটি মামলায় অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্থ এক কথা নয়। যে কেউ যে কাহারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। তাই বলেই যে, আপনি চাকুরী হতে বঞ্চিত হবেন এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই মামলার অবস্থান ও মামলার ধরনের উপর সবকিছু নির্ভর করে। নিশ্চয়ই কাউকে সাধারন আঘাত করার অভিযোগ আর হত্যা করার অভিযোগ এক বিষয় নয়। আবার দেওয়ানী মামলা ও ফৌজদারী মামলার বিষয়বস্তুও এক জিনিস নয়।

যেসব মামলা সরকারী চাকুরীতে কোন বাধা নয়।

সাধারনত আমাদের দেশে ২ ধরনের মামলা রয়েছে।

১। দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা।

২। ফেীজদারী অপরাধ সংক্রান্ত মামলা।

দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হলো সেসকল মামলা যেসব মামলার বিষয়বস্তু হল পদ, পদবী ও সম্পত্তির অধিকার। সাধারনত জমি জমা সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা এবং কোন অধিকার নিয়ে মামলাই হল দেওয়ানী মোকদ্দমা। এ সকল মামলা চাকুরীর পথে কোন বাধা নয়। তবে কোন আদালত কর্তৃক যদি আপনি ঋনখেলাপী অথবা দেওলিয়া ঘোষিত হন তাহা হ্ইলে উক্ত বিষয়টি আপনার চাকুরীর পথে বাধা হতে পারে।

যেসকল মামলা চাকুরীর জন্য অভিশাপঃ

সাধারনত ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগে আনিত কোন মামলাই চাকুরীর জন্য অভিশাপ। ফৌজদারী অপরাধ বলতে আমরা বুঝি মারামারি, খুন, রাহাজানি, মাদক কারবারি, ধর্ষন, আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে ফৌজদারী অপরাধের গন্ডি বেরেছে বহুগুন। প্রতিদিন এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নানান সব অপরাধ। সাধারনত ফৌজদারী মামলার মুল ভিত্তি হল দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন দমন আইন ২০১৮, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, আইন শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রæত বিচার) আইন ২০০০ ইত্যাদি আইন সহ আরও অনেক আইন রয়েছে যা ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত আইন। এসব আইনসমুহে যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকে তাহা হইলে তা ফৌজদারী মামলা।

অনেক আইনজ্ঞ বলেন যে, যেসব অপরাধের জন্য বিজ্ঞ আদালত দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ৫৩ ধারা মোতাবেক ৫ ধরনের সাজা দিতে পারেন তাই ফৌজদারী মামলা। যেমনঃ

১। মৃত্যুদন্ড

২। যাবজ্জীবন কারাদন্ড।

৩। কারাদন্ড (সশ্রম/বিনাশ্রম)।

৪। সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরন।

৫। অর্থদন্ড।

অতএব ফৌজদারী মামলা চাকুরীর পথে বাধা হতে পারে।

চলমান বা বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে চাকরীর বিধানঃ

যেকোন মানুষই যেকোন সময় কোন মামলায় অভিযুক্ত হতে পারে। যেকেউ যে কাহারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। কেবল সেকারনেই কাউকে নিশ্চিত করে দোষী বা অপরাধী বলা যাবে না। ন্যায়বিচারের একটি সূত্র হল All Person are innocent unless proven guilty। সুতরাং আইন মোতাবেক একজন অভিযুক্ত ব্যাক্তি সমস্ত স্বাক্ষ্য প্রমান অন্তে দোষী সাব্যস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপরাধী নন। সুতরাং কারও মামলা চলমান থাকলে তাহার চাকুরী পেতে কোন বাধা নেই।

কিন্তু বাস্তবিক প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। কোন প্রতিষ্ঠানই কোন ত্রæটিপূর্ন প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চান না। এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়, মামলায় অভিযোগের ধরন, প্রাথমিক বিশ্বাসযোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও রাষ্ট্রস্বার্থ ইত্যাদি।

নিষ্পত্তিকৃত মামলায় চাকুরীঃ

কোন একটি মামলা নিষ্পত্তি বা সমাপ্ত হওয়ার কয়েকটি ধাপে সুযোগ রয়েছে। ধাপগুলো হলঃ

১।      অব্যাহতি প্রাপ্তির মাধ্যমেঃ পুলিশ তদন্ত করে যদি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পায় তাহলে পুলিশ আপনার পক্ষে চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করবেন এবং আপনাকে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করবেন। আদালত যদি চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহন করেন তাহলে আপনাকে অব্যাহতি প্রদান করবেন। এছাড়াও আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মত কোন উপাদান যদি মামলায় না থাকে তাহলেও আদালত আপনাকে অব্যাহতি প্রদান করবেন। এছাড়াও যদি দীর্ঘদিন বাদী বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে স্বাক্ষী প্রদান না করেন তাহা হলেও প্রয়োজনীয় স্বাক্ষীর অভাবে আদালত আপনাকে অব্যাহতি দিতে পারেন। যেভাবেই আপনি অব্যাহতি পান না কেন, চাকুরী প্রাপ্তিতে আর কোন বাধা থাকবে না।

২।     রায়ে খালাষ প্রাপ্তির মাধ্যমেঃ সমস্ত স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে যদি আদালত মনে করেন আপনি নির্দোষ ও বাদী তাহার মামলা প্রমান করতে ব্যার্থ হয়েছে তাহা হলে আদালত আপনাকে বেকসুর খালাষ প্রদান করবেন। এবং এক্ষেত্রেও আপনার চাকুরী পেতে কোন বাধা নেই।

শত্রুতাবসত কেউ মিথ্যা মামলা করলে করনীয়ঃ

কেহ যদি আপনার বিরুদ্ধে শত্রæতাবসত মিথ্যা মামলা করে এবং সে যদি তাহার মামলা প্রমান করতে ব্যার্থ হন কিংবা যদি বিজ্ঞ আদালত যদি মনে করেন, বাদী শুধুমাত্র হয়রানী করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন তাহা হলে তাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা, হয়রানী মুলক মামলা দায়েরের জন্য শাস্তি প্রদান করবেন। অথবা আপনি নিজেও তাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং হয়রানী করার জন্য মামলা দাযের করতে পারবেন।

অব্যাহতি ও খালাষের পর করনীয়ঃ

অব্যাহতি কিংবা খালাষ পাওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই উক্ত অব্যাহতি কিংবা খালাষ আদেশ এর সহিমোহরী নকল আপনার নিয়োজিত আইনজীবির মাধ্যমে উত্তোলন করতে হবে। এবং উক্ত আদেশ কিংবা আদালতের রিকল সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে। এবং তাহাদেরকে অবগত করতে হবে যে, আপনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং আপনি অব্যাহতি অথবা খালাষ পেয়েছেন। তাহলে থানা কর্তৃপক্ষ তাহাদের নথিতে উক্ত বিষয়টি লিপিবদ্ধ করে রাখবেন এবং পরবর্তীতে যদি কখনো পুলিশী ভেরিফিকেশন হয় তাহা হলে তাহারা উক্ত বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উল্ল্যেখ করবেন। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার আর চাকুরী প্রাপ্তিতে কোন বাধা থাকবে না।

আপনার বিরুদ্ধে কোন প্রকার মামলা না থাকার পরেও যদি পুলিশ মিথ্যা তথ্য প্রদান করে রিপোর্ট প্রদান করে কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে হঠকারীমুলকভাবে চাকুরী প্রদান না করে, তাহা হলে আপনি নিন্মোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহন করতে পারেন।

১।      ভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক তদন্তের আবেদন করতে পারেন।

২।     কর্তৃপক্ষের উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।

৩।     মহামান্য হাইকোর্টে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করতে পারেন।

৪।      পুলিশ যদি ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কিংবা ঘুষ চায় তাহা হলে তাহাদের বিরুদ্ধে সরাসরি স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।

আইনের আশ্রয় আইনি আলোচনায় সর্বদা আছে আপনাদের পাশে।

আমাদের আয়োজনগুলি ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আপনার মতামত ও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

আইন বিষয়ে আরও জানতে আমাদের আইনের আশ্রয় চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন ও আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজ আইনের আশ্রয়ের সাথেই থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।

Law Article

সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার

সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার। সাইবার ক্রাইম এর শাস্তি কি। WHAT IS CYBER BULLYING AND REMEDIES.

সাইবার বুলিং কি? সাইবার বুলিং হচ্ছে একধরনের সাইবার অপরাধ। বর্তমান সময়ে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সাধারন অর্থে বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুইজন মানুষের

আরও পড়ুন...
আত্বরক্ষার অধিকার

অপরাধ করেও কখন মাফ পেয়ে যাবেন।। আত্বরক্ষার অধিকার

জান বাচানো ফরজ এরুপ একটি কথা আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। আসলেই তাই। আইনেও নিজের জীবন ও সম্পত্তি বাচানোর জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর এজন্য যদি

আরও পড়ুন...