ফৌজদারী মামলার ধাপসমূহ

ফৌজদারী মামলা তে কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়। ক্রিমিনাল মামলার বিভিন্ন ধাপসমূহ।

Table of Contents

ক্রিমিনাল/ ফৌজদারী মামলা র বিভিন্ন ধাপসমূহঃ

সাধারনত ফৌজদারী মামলা বলতে আমরা বুঝি সেসব মামলাসমূহ যেসব মামলায় কোন ব্যাক্তির রাষ্ট্রের আইনবিরোধী কোন অপরাধের শাস্তি প্রদানের জন্য দায়ের করা হয়। যেমন, হত্যা মামলা, ধর্ষন, মাদক কারবারি, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি সহ আরোও অনেক মামলা। সাধারনত দন্ডবিধি ১৮৬০ কে ফৌজদারী মামলার প্রধান ভিত্তি ধরা হয়। এছাড়াও আরোও অনেক বিশেষ উদ্দেশ্য ও বিষয়ে আলাদা আলাদা স্পেশাল আইন রয়েছে। এসব আইনে অপরাধের প্রকৃতি ও তাহার সাজার কথা বলা রয়েছে।

ফৌজদারী মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করতে কতগুলো ধাপ অনুসরন করা হয়। আর এ ধাপগুলো সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এ আলোচনা করা হয়েছে। এবং একটি ফৌজদারী মামলা ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এ বিধান মোতাবেক সম্পূর্নভাবে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। আমাদের আজকের আলোচনা ফৌজদারী/ ক্রিমিলাল মামলা নিষ্পত্তির বিভিন্ন ধাপসমূহ সম্পর্কে।

১।    ফৌজদারী মামলা দায়েরঃ যখন কোন ব্যাক্তি দন্ডবিধি আইন কিংবা অন্য কোন আইনে কোন অপরাধ করে তখন সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। সে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি কোন সাধারন জনগনও হতে পারে। আবার রাষ্ট্র নিজেও হতে পারে। ব্যাক্তির ক্ষতিতে যেমন ব্যাক্তি সংক্ষুব্ধ হয় তেমনিভাবে একইসাথে যেহেতু রাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন হয় সেহেতু রাষ্ট্রও ও সংক্ষুব্ধ হয়। সুতরাং কোন অপরাধে ব্যাক্তি এবং রাষ্ট্র উভয়েরই মামলা করার সুযোগ রয়েছে।

সাধারনত দুইভাবে মামলা দায়ের করা যায়। যথা, ১। থানায় এজাহার/ দরখাস্ত দায়েরের মাধ্যমে। ২। সরাসরি আদালতে সি. আর. (কমপ্লেইন্ট পিটিশন) কেস দায়েরের মাধ্যমে।

ফৌজদারী কার্যবিধির ২য় তফসিল মোতাবেক থানায় আমলযোগ্যতার ভিত্তিতে দুই ধরনের অপরাধ রয়েছে। যথা- আমলযোগ্য ও আমলঅযোগ্য অপরাধ।

আমলযোগ্য অপরাধঃ আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪(১ চ) ধারায় ও পিআরবির ২৪৩ বিধিতে আলোচনা করা হয়েছে। যেসকল অপরাধে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে সেসকল মামলাসমূহকে বলা হয় আমলযোগ্য মামলা। এসকল মামলায় পুলিশ আদালতের অনুমতি ব্যাতিরেকেই তদন্ত করতে পারে।

আমলঅযোগ্য অপরাধঃ আমলঅযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪(১ ঢ) ধারায় ও পিআরবির ২৫৪ বিধিতে আলোচনা করা হয়েছে। যেসকল অপরাধে পুলিশ আদালতের বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেনা ও আদালতের অনুমতি ব্যাতিত তদন্ত করতে পারেনা সেসকল মামলা সমূহ হল আমলঅযোগ্য অপরাধ। এসকল অপরাধে থানায় মামলা দায়ের করা হয় না। শুধু মাত্র জিডি এন্ট্রি করা হয়।

আদালতে/ কোর্টে মামলা দায়েরঃ

আদালতে সকল ধরনের মামলাই দায়ের করা যায়। এছাড়াও কোন মামলা যদি থানা কর্তৃপক্ষ গ্রহন না করে তাহলে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞ আদালত ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ২০০ ধারা মোতাবেক বাদী/ দরখাস্তকারীর জবানবন্দি গ্রহন করবেন ও সন্তুষ্টিচিত্তে আদেশ প্রদান করবেন। সাধারনত বিজ্ঞ আদালত কয়েক ধরনের আদেশ দিয়ে থাকেন। যেমনঃ

১।     সরাসরি গ্রেফতারী পরোয়ানা/ ওয়ারেন্ট ইস্যু।

২।    আসামীদের প্রতি সমন/ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশ প্রদান করবেন।

৩।্  কারনাভাবে বা মামলা গ্রহন করার কোন হেতু না থাকলে সরাসরি নাকচ করে দিবেন।

৪।    তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী সংস্থাসমূহে প্রেরন করতে পারেন।

৫।    জুডিশিয়াল তদন্তের/ বিচার বিভাগীয়/ ম্যাজিষ্টেট কর্তৃক তদন্তের আদেশ প্রদান করতে পারেন।

৬।    তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তীতে ওয়ারেন্ট/ সমন প্রদান করবেন।

ইউটিউব ভিডিও-

২।    তদন্ত প্রতিবেদন/ চার্জশীটঃ পুলিশ আমলযোগ্য মামলায় কিংবা আমলঅযোগ্য মামলায় আদালতের আদেশ মোতাবেক কিংবা সি. আর মামলায় আদালতের আদেশ মোতাবেক মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিরুপনে তদন্ত করবেন। ও ১৬১ ধারা মোতাবেক স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহন করবেন ও তদন্ত শেষে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৭৩ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা প্রদান করবেন।

তদন্ত প্রতিবেদন ২ ধরনের হতে পারে। যেমনঃ

১।     অভিযোগপত্র/ চার্জশিটঃ পুলিশ তদন্ত করে যদি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় তাহলে বিজ্ঞ আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করবেন।

২।    চুড়ান্ত প্রতিবেদন/ ফাইনাল রিপোর্টঃ পুলিশ কিংবা তদন্তকারী সংস্থা যদি তদন্ত করে অভিযোগের কোন প্রাথমিক সত্যতা না পান তাহলে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন/ ফাইনাল রিপোর্ট জমা প্রদান করবেন ও আসামীদের মামলা হতে অব্যাহতির আবেদন করবেন।

তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহন/ পুন তদন্তঃ তদন্ত প্রতিবেদন জমা প্রদান করার পর বিজ্ঞ আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে তা গ্রহন করবেন ও বিচারের জন্য প্রস্তুত করবেন। এবং চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর বাদী/ অভিযোগকারীকে নোটিশ দিবেন এই মর্মে তার কোন বক্তব্য রয়েছে কিনা। যদি বাদী পুনরায় তদন্তের আবেদন করে নারাজি দরখাস্ত প্রদান করেন তাহলে বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্টিচিত্তে পুনরায় তদন্তের আদেশ প্রদান করবেন। অথবা চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহন করে আসামীদের অব্যাহতি দিবেন।

৩।    চার্জ গঠন বিষয়ক শুনানীঃ অভিযোগপত্র/ চার্জশিট গ্রহনের পর মামলা যখন বিচারের জন্য কোন বিচারিক আদালতে প্রেরিত হবে তখন বিজ্ঞ আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহন/ চার্জ গঠন বিষয়ক শুনানী গ্রহন করবেন। এমতাবস্থায় ম্যাজিষ্টেট আদালত হলে আসামী ২৪১ ক ধারা মোতাবেক ও দায়রা আদালত হলে ২৬৫ গ ধারা মোতাবেক অব্যাহতির আবেদন করবেন। বিজ্ঞ আদালত যদি অভিযোগ গঠন করার মত কোন আলামত না পান তাহলে উপরোক্ত ধারা মোতাবেক আসামীদের অব্যাহতি প্রদান করবেন।

আর অভিযোগ গঠন করার মত আলামত থাকলে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৩ ধারা মোতাবেক ও দায়রা আদালত ২৬৫ ঘ ধারা মোতাবেক অভিযোগ গঠন করবেন ও স্বাক্ষী গ্রহন শুরু করবেন।

৪।    স্বাক্ষ্যগ্রহনঃ মামলার এ পর্যায়ে বিজ্ঞ আদালত বাদীপক্ষের স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করবেন ও আসামীপক্ষ স্বাক্ষীদের জেরা করবেন। ও বিজ্ঞ আদালত উক্ত স্বাক্ষ্য ও জেরা লিপিবদ্ধ করবেন।

৫।    সাফাই স্বাক্ষী/ আসামীর পক্ষের স্বাক্ষীঃ ফৌজদারী কার্যবিধি ৩৪০ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালত আসামীকে তার আত্বপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করবেন ও তাকে তার সপক্ষে সাফাই স্বাক্ষী প্রদান করার সুযোগ প্রদান করবেন। এমতাবস্থায় বাদীপক্ষ আসামীকে জেরা করবেন।

৬।    ৩৪২ ধারায় আসামীর পরীক্ষাঃ এ পর্যায়ে বিজ্ঞ আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মোতাবেক আসামীকে পরীক্ষা করবেন ও বাদী বা প্রসিকিউশন কর্তৃক উথাপিত অভিযোগ ও স্বাক্ষ্য প্রমানের বিষয়ে আসামীকে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে, আদালত অনুসন্ধান বা বিচারের যেকোন পর্যায়ে আসামীকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এবং উপরোক্ত উদ্দেশ্যে বাদী পক্ষের স্বাক্ষ্য গ্রহনের পর ও তাকে আত্বপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার পূর্বে আদালত তাকে সাধারনভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন।

৭।    যুক্তিতর্ক শুনানী/ Argument: মামলার এপর্যায়ে বিজ্ঞ আদালত উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য করবেন। উভয়পক্ষ  অভিযোগ, স্বাক্ষী ও জেরা, ও মামলার সার্বিক বিস্তারিত বিষয়ে নিজ নিজ যুক্তি বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করবেন ও আসামীপক্ষ খালাষের প্রার্থনা করবেন ও বাদীপক্ষ আসামীপক্ষের সাজার আবেদন করবেন।

৮।    রায়ঃ রায় একটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমের চুড়ান্ত ধাপ। এ পর্যায়ে বিজ্ঞ আদালত একটি মামলার অভিযোগ, ও সকল স্বাক্ষ্য প্রমান বিবেচনায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন ও অভিযোগটি প্রমানিত হলে আসামীকে সাজা প্রদান করবেন ও প্রমানিত মর্মে প্রতীয়মান না হলে আসামীকে খালাষ প্রদান করবেন। এবং সাজা ও খালাষের বিষযে বিজ্ঞ আদালতের বিবেচনা বিচার্য্য বিষয় ও যুক্তি রায়ের মধ্যে উল্ল্যেখ করবেন।

আপীল দায়েরঃ কোন রায়ে যদি কোন পক্ষ সংক্ষুব্দ হয় তাহলে উক্ত পক্ষ সংশ্লিষ্ট আপীল আদালতে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করবেন।

আইন বিষয়ে আরোও জানতে আইনের আশ্রয় আছে আপনাদের পাশে। আইনের আশ্রয় আইন অঙ্গনে আইনজীবিদের দ্বারা পরিচালিত একটি ব্যতিক্রমী আইন চেম্বার।

ফৌজদারী মামলা তে কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়। ক্রিমিনাল মামলার বিভিন্ন ধাপসমূহ।

ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/ainerasroy

Youtube- আইনের আশ্রয়

আরও জানতে ভিজিট করুন- www.ainerasroy.com

(বিঃ দ্রঃ) কোন ধরনের কপরিাইট পাইরেসি আমাদরে কাম্য নয়। আমাদের দেয়া তথ্য ও প্রতিকার সম্পূর্ন শিক্ষা ও সচেতনতামুলক মাত্র, কেউ ইহাকে আইনগত মতামত বা পরার্মশ রূপে ব্যবহার করলে তাহার দায় সর্স্পূণ ব্যাক্তিক বটে। এ ধরনের প্রয়োজনে সরাসরি একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর দ্বারস্ত হওয়ার জন্য সর্তক করা হল।)

Law Article

কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের যত কিচ্ছা কাহিনী

কোর্ট ম্যারিজ বা পালিয়ে বিয়ের যত কিচ্ছা কাহিনী

বিবাহ আমাদের সমাজে একটি পরিচিত ও আনন্দের অধ্যায়। বিবাহের মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ একত্রে বসবাস ও পরিবার গঠনের অনুমতি লাভ করে। সাধারনত, পরিবারের

আরও পড়ুন...
ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/এডভোকেট/উকিলের মধ্যে পার্থক্য

ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/এডভোকেট/উকিলের মধ্যে পার্থক্য

ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/ এডভোকেট/ উকিলের মধ্যে পার্থক্য অনেকের মনেই প্রশ্নের সৃষ্টি করে। শাব্দিক অর্থে উকিল বা এডভোকেট অর্থ অপরের প্রতিনিধি বা কারোও পক্ষে বিচারকার্যে প্রতিনিধিত্ব

আরও পড়ুন...
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন, করনীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ, করনীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর কিঃ ডেঙ্গু জ্বর সাধারনত একটি মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমন। সাধারনত এ রোগের ধারক ও বাহক হলো এডিস মশা। এরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে একটি মশা কামড়

আরও পড়ুন...