জায়গা জমি বা দেওয়ানী মামলার ধাপ

জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপ সমূহ

Table of Contents

জায়গা জমির মামলা বা কোন পদ পদবী ও সম্পত্তির অধিকার নিয়ে যে মামলা হয় তাই দেওয়ানী মোকদ্দমা। সাধারনত আমরা এসব মামলা দীর্ঘ দিন চলতে দেখি। যার কারন আমাদের অনেকেরই অজানা। সাধারনত এসব মামলায় অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যার কারনে মামলায় দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। নিন্মে জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপ সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। দেওয়ানী মামলার ধাপ

জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপসমূহ

১। সেরেস্তাদারের নিকট মামলার আর্জি দাখিলঃ

দেওয়ানী মামলার ১ম ধাপ হলো মামলা এখতিয়ারভুক্ত আদালতের সেরেস্তাদারের নিকট মামলার আর্জি জমা দেওয়া। অতপর তিনি মোকদ্দমার কোর্ট ফি, সমন, ডাকরশিদ সহ সবকিছু ঠিক রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করবেন এবং একটি রেজিষ্টার ভুক্ত করবেন। অতপর উক্ত রেজিষ্টারের সিরিয়াল মোতাবেক একটি নাম্বার পড়বে। যা মামলা নাম্বার হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন দেওয়ানী মোকদ্দমা নং- ২০/২০২২।

২। আর্জি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান।

আর্জি দাখিলের পরে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ফাইলে কোন ভুল বা ঘাটতি রয়েছে তাহলে আদালত আর্জিটি ফেরত বা প্রত্যাখান করবেন।

যদি এখতিয়ারগত কারনে কোন ভুল হয় তাহলে আদালত মামলাটি সঠিক আদালতে দাখিল করার জন্য দেওয়ানী কার্যবিধির ৭ আদেশের ১০ বিধি মোতাবেক ফেরত প্রদান করবেন।

আদালত ৭ আদেশের ১১ বিধি মোতাবেক ৪টি কারনে আর্জি প্রত্যাখ্যান/ খারিজ করতে পারেন।

  • মোকদ্দমা দায়েরের কারন সঠিকভাবে উল্ল্যেখ না থাকলে।
  • মোকদ্দমার মুল্যমান/ তায়দাদ/ বিবাদমান জমির মুল্যমান কম লিখলে।
  • কোর্ট ফিস কম জমা দিলে।
  • মোকদ্দমাটি আইনগত কোন বিধিনিষেধ বা ত্রুটি থাকলে।

দেওয়ানী মামলার ধাপ

৩। সমন জারী/ সমন ফেরতঃ

সঠিকভাবে আর্জি দাখিল হলে ও দেওয়ানী মোকদ্দমা হিসেবে অন্তভুক্ত হলে আদালত বিবাদীদেরকে মোকদ্দমার বিষয়ে অবগত করার জন্য ও নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হয়ে দাবীর পক্ষে বা বিপক্ষে তাহাদের বক্তব্য প্রদানের জন্য নোটিশ/ সমন প্রেরন করবেন। সরকারী জারীকারক উক্ত নোটিশ বিবাদীদের নিকট প্রদান করে জারী করবেন বা কোন কারনে দেওয়া না গেলে/ জারী না হলে কারন লিপিবদ্ধ করবেন বা বিকল্প পদ্ধতিতে জারী করবেন। ও তার কপি আদালতে ফেরত প্রদান করবেন। যা দেওয়ানী কার্যবিধির ৫ আদেশে আলোচনা করা হয়েছে।

৪। লিখিত জবাব দাখিল (Written Statement)

বিবাদীদের প্রতি সমন জারী হলে তাহারা আদালতে যথা নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়ে তাহাদের দাবীর সপক্ষে লিখিত জবাব দাখিল করবেন। তবে যদি জবাব প্রস্তুত না হয় তাহলে বিবাদীগন ৬০ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক সময় পাবেন। এবং যদি বিবাদী বাংলাদেশ সরকার হয় তাহলে ৩ মাস সময় পাবেন।

৫। একতরফা শুনানী/ ১ম শুনানী (Ex Partee Hearing)

বিবাদীগন যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দাখিল না করেন তাহলে আদালত বাদীর একতরফা বক্তব্য শুনানীর জন্য দিন নির্ধারন করবেন। ও একতরফাভাবে নিষ্পত্তি করবেন। আর যদি যথাসময়ে বিবাদী জবাব দাখিল করেন তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপে অগ্রসর হবেন।

আরোও জানুনঃ

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

পারিবারিক নারী নির্যাতনে কি কি মামলা করা যায়

মামলা থাকলে সরকারী চাকুরী হবে কি?

মামলায় কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়?

কোম্পানী গঠনের খরচ ও সহজ নিয়ম

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? কিভাবে পাবেন প্রতিকার

৬। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (Alternative Dispute Resolution- ADR)

মামলার বিবাদীগন যদি আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিল করেন ও আর্জির বক্তব্য অস্বীকার করেন তাহলে আদালত উভয়ের মধ্যে শুনানী শুরু করার পূর্বে দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯ক ধারা মোতাবেক উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধটি নিষ্পত্তি করার জন্য পাঠাবেন।

জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপ সমূহ

৭। ইস্যু গঠন/ বিচার্য বিষয় নির্ধারন।

বিকল্প পদ্ধতি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে যদি বিরোধটি নিষ্পত্তি করা না যায় তাহলে আদালত মামলায় কোন কোন বিষযের উপর বিচার করবেন সে বিষয়গিুলি নির্ধারন করবেন। তাই ইস্যু গঠন বা বিচার্য বিষয় নির্ধারন।

৮। তথ্য উদঘাটন ও পরিদর্শন/ ৩০ ধারার পদক্ষেপ

মোকদ্দমার বিরোধীয় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একপক্ষ অন্যপক্ষকে কোন দলিল বা স্বীকারোক্তি সম্পর্কে কোন বিষয় বা তথ্য প্রকাশের জন্য প্রশ্ন করতে পারেন ও অপরপক্ষ যথাসময়ে উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করবেন।

৯। চুড়ান্ত শুনানীর তারিখ নির্ধারন (SD- Settling Date)

এ ধাপে আদালত চূড়ান্ত শুনানীর জন্য দিন নির্ধারন করবেন ও পক্ষগনকে তাহাদের মামলা প্রমানের জন্য স্বাক্ষীর তালিকা দিতে বলবেন।

১০। চুড়ান্ত শুনানী

মামলার এ পর্যায়ে আদালত স্বাক্ষীগনের স্বাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করবেন ও অপরপক্ষ জেরা করবেন। পক্ষগনের কোন দালিলিক স্বাক্ষ্য থাকলে তা আদালতে উপস্থাপন করবেন। আদালতে ১ম যেদিন শুনানী হবে সেটি হলো Peremptory Hearing ও যদি একদিনে সকল স্বাক্ষীগ্রহন সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করবেন। যা হলো Further Hearing.

১১। যুক্তিতর্ক

মামলার পক্ষগনের সকল স্বাক্ষী গ্রহন হয়ে গেলে আদালত যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারন করবেন। উক্ত শুনানীতে উভয়পক্ষ মামলার সমস্ত স্বাক্ষী প্রমানাদি ও নিজেদের পক্ষের যক্তি আদালতের সামনে উপস্থাপন করবেন। অতপর আদালত মামলার রায় ঘোষনার জন্য দিন নির্ধারন করবেন।

১২। রায়

মামলায় ‍যুক্তির্ত শুনানী হয়ে গেলে আদালত আর্জি, জবাব ও সমস্ত স্বাক্ষ্য প্রমানিাদি বিবেচনায় মামলার সার্বিক ও বিচার্য বিষয় সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন। তাই রায়। রায় সাধারনত সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে।

১৩। ডিক্রি

রায় প্রদানের ৭ দিনের মধ্যে আদালত ডিক্রি পস্তুত করবেন। সাধারনত ডিক্রিতে রায়ের বিস্তারিত থাকে। যেমন উভয়পক্ষের বক্তব্য, সমস্ত স্বাক্ষ্য প্রমানাদি বিশ্লেষন, বিচার্য বিষয়, রায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনে আদালতের যুক্তি ইত্যাদি।

১৪। ডিক্রি জারী

মোকদ্দমায় ডিক্রি প্রদানের পর যদি রায় কার্যকর না হয় তাহলে আদালতে উক্ত ডিক্রি কার্যকর করার জন্য ডিক্রিজারী মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মোকদ্দমায় আদালত ডিক্রি মোতাবেক সিদ্ধান্ত পালনে পক্ষগনকে বাধ্য করার পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

১৫। রিভিউ/ পুনঃ বিবেচনা

মোকদ্দমাটি বিচারাধীন সময়ে যদি কোনো পক্ষ কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় উপস্থাপন করতে ব্যার্থ  হন বা আদালত যদি কোনো বিষয় বিবেচনা করতে ব্যার্থ হন যার কারনে কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হন তাহলে রায় প্রদানের পর উক্ত সংক্ষুব্ধ পক্ষ রায় টি পুন বিবেচনার জন্য রায় প্রদানকারী আদালতে রিভিউ করতে পারবেন। দেওয়ানী মামলার ধাপ।

১৬। আপীল ও রিভিশন

মোকদ্দমার রায়ে কোনো পক্ষ যদি সংক্ষুব্ধ হন তাহলে উক্ত পক্ষ এখতিয়ারসম্পন্ন আপীল আদালতে উক্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপীল বা রিভিশন দায়ের করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপীল আদালত উক্ত বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।

উপরোক্ত ধাপগুলি হলো জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপ। উক্ত ধাপগুলি অনুসরন করেই একটি মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করতে হয়। এ ছাড়াও মোকদ্দমা চলাকালীন সময়ে পক্ষগন কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আরোও অন্তবর্তীকালীন দরখাস্ত দায়ের করতে পারেন। যেমন, স্থানীয় তদন্তের দরখাস্ত, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত, পক্ষভুক্তির দরখাস্ত ইত্যাদি।

জায়গা জমির মামলা বা দেওয়ানী মামলার ধাপ সমূহ

আরোও জানুনঃ

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

পারিবারিক নারী নির্যাতনে কি কি মামলা করা যায়

মামলা থাকলে সরকারী চাকুরী হবে কি?

মামলায় কিভাবে সাজা বা খালাষ হয়?

কোম্পানী গঠনের খরচ ও সহজ নিয়ম

চেক ডিজঅনার মামলা হলে করনীয় কি? কিভাবে পাবেন প্রতিকার

আইন বিষয়ে আরোও জানতে আমাদের ফেসবুক পেজ আইনের আশ্রয়ে মেজেস করতে পারেন।

বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা করার শাস্তি

Law Article

ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/এডভোকেট/উকিলের মধ্যে পার্থক্য

ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/এডভোকেট/উকিলের মধ্যে পার্থক্য

ব্যারিস্টার ও আইনজীবি/ এডভোকেট/ উকিলের মধ্যে পার্থক্য অনেকের মনেই প্রশ্নের সৃষ্টি করে। শাব্দিক অর্থে উকিল বা এডভোকেট অর্থ অপরের প্রতিনিধি বা কারোও পক্ষে বিচারকার্যে প্রতিনিধিত্ব

আরও পড়ুন...
সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার

সাইবার বুলিং কি এবং প্রতিকার। সাইবার ক্রাইম এর শাস্তি কি। WHAT IS CYBER BULLYING AND REMEDIES.

সাইবার বুলিং কি? সাইবার বুলিং হচ্ছে একধরনের সাইবার অপরাধ। বর্তমান সময়ে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সাধারন অর্থে বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুইজন মানুষের

আরও পড়ুন...